প্রাচীন কালে পীরগঞ্জঃ রংপুরের অংশ হিসেবে প্রাচীন কালে পীরগঞ্জ কামরূপ রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত ছিল। পৌরাণিক যুগে মহিরঙ্গ দানব ছিল কামরূপের প্রথম রাজা। মহিরঙ্গ রাজার পর চার জন রাজা গত হলে রামায়নের যুগে নরক রাজা কামরূপে রাজত্ব করেন। সে সময় পীরগঞ্জের করতোয়া নদী পর্যন্ত কামরূপ রাজ্য বিস্তৃত ছিল।
মহাভারতের যুগে কামরূপের রাজা হন ভগদত্ত। এই কামরূপ রাজা ভগদত্তের রংমহল ছিল ঘাঘট নদীর তীরে। তাই এ স্থানের নাম রংপুর হয়েছে বলে কোন কোন ঐতিহাসিকগণ মন্তব্য করেছেন। রংপুরের অদুরে মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রা বন্দের নাম করণ হয়েছে রাজা ভগদত্তের কন্যা পায়রা মতির নামানুসারে।
রাজা ভগদত্ত কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে পঞ্চ পান্ডবের অন্যতম বীর অর্জুনের হাতে পরাজিত ও নিহত হন। ১৯০৫-১০৩০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত গোপী চাঁদ রাজা কামরূপে রাজত্ব করেন। গোপী চাঁদ বা রাজা গোবিন্দ চন্দ্রের রাজধানী ছিল নীলফামারী জেলার অন্তর্গত ডিমলা উপজেলার পাটিকা নগরে। এই পাটিকা নগরীর স্মৃতি বহন করছে পীরগঞ্জের পাটিকাপাড়া গ্রামে। পীরগঞ্জের বাগদুয়ার, দানেশনগর, লোরারপাট, উদয়পুর ঊল্লেখিত রাজ-রাজড়াদের ও তাদের বংশধরদের স্মৃতি বহন করে আসছে। উল্লেখ্য যে, প্রাচীন কালে পীরগঞ্জে বাগদুয়ার পরগণার অধীন ছিল পাটকাপাড়া এবং উদয়পুর। বর্তমানে তা মিঠাপুকুর উপজেলার অন্তর্ভূক্ত।
মধ্যযুগে পীরগঞ্জঃপঞ্চদশ শতাব্দীতে কামরূপে অভ্যূদয় ঘটে সেন রাজ বংশের। নীল ধ্বজ, চক্র ধবজ ও নীলাম্বর ছিলেন এই রাজ বংশের প্রভাবশালী রাজা। নীল ধ্বজ, কুচবিহার, নিম্ন আসাম ও বৃহত্তর রংপুর প্রভৃতি নিয়ে কামতা রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। নীল ধ্বজ এর পর যথাক্রমে চক্র ধ্বজ ও নীলাম্বর কামতা রাজ্যের অধিশ্বর হন। রাজা নীলাম্বর তার রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য দূর্গ নির্মাণ করেছিলেন। পীরগঞ্জের চতরাহাটের পশ্চিম পার্শ্বে নীল দরিয়ার দূর্গ তাদের অন্যতম। কামতা রাজ্য করতোয়া নদী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট পর্যন্ত ছিল তার রাজ্যর দক্ষিণ সীমা। রাজধানী কামতাপুর থেকে ঘোড়াঘাট পর্যন্ত যে মেঠো রাজপথটি দৃষ্ট হয়, তা রাজা নীলাম্বর কর্তৃক নির্মিত।
সুপ্রসিদ্ধ ব্যবসা কেন্দ্র চতরা হাটের পশ্চিম পার্শ্বে এই রাজ পথটি অতিক্রম করে অর্দ্ধ কিঃমিঃ পথ রিক্সা, ভ্যান বা পাঁয়ে হেটে সামনে অগ্রসর হলেই রাজা নীলাম্বরের দূর্গ বা নীল দরিয়ার দূর্গের ধ্বংসাবশেষ দৃষ্টি গোচর হয়। এখানে ৯২.০০ একর সুবিশাল জলাধার বেষ্টন করে আছে ৪৮ একর স্থল ভাগকে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস