Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

উপজেলার ঐতিহ্য

বাংলায় মৌর্য শাসন:-মহাভারতের বর্ণনা মতে, বলি রাজার স্ত্রী সুদেষ্ণা গর্ভে জনৈক দীর্ঘত্তমা ঋষির ঔরষে পাঁচ জন পুত্র জন্ম নেয়। তারা অঙ্গ,বঙ্গ, কলিঙ্গ, পুন্ড্র ও সুক্ষ্ম নামে পাঁচটি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। সম্রাট আলেক জান্ডার খ্রিস্টপূর্ব ৩২৭ অব্দে ভারতের উত্তর- পশ্চিম অংশ আক্রমণ করেন। আলেক জান্ডারের প্রত্যাবর্তনের পরে ভারত বর্ষে এক বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন,  মৌর্য বংশীয় রাজা চন্দ্র গুপ্ত মৌর্য। বাংলাদেশের উত্তর অঞ্চল মৌর্য সাম্রাজ্যের অধীন ছিল বলে মহাস্থানের শিলালিপিতে প্রমাণ পাওয়া যায়।

   

গুপ্ত শাসন:- গুপ্ত যুগে সমগ্র উত্তর বঙ্গে গুপ্ত শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় বলে জানা যায়। সে সময় এ অঞ্চলেন প্রাদেশিক শাসনের কেন্দ্র ছিল পুন্ড্র নগর।

   

গুপ্তোত্তর যুগ:-  ৬ষ্ঠ শতকের প্রথম দিকে গুপ্ত সম্রাজ্যের পতন হয়। উত্তর ভারতে রাজত্ব করেন খন্ড খন্ড রাজ বংশ। তাদের মধ্যে গোপ চন্দ্র ছিলেন বিশেষ ক্ষমতাধর। পরবর্তীতে ৫২৫ --- ৬০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত উল্লিখিত  রাজারা রাজত্ব করেন। ইতিহাসে তারাই পরবর্তী গুপ্ত রাজা বলে পরিচিত। ৬ শতকের শেষ দিকে তাদের শাসন ব্যাবস্থা বিলুপ্ত হয়।

         

সামন্তরাজ শশাঙ্ক:- পরবর্তী গুপ্ত বংশের পর বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অংশে সামন্তরাজ শশাঙ্ক বিশাল স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ৬০০---৬৩৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন।

             শশাঙ্কের পরে গৌড় রাজ্যে রাজত্ব করেন সম্রাট হর্ষবর্ধন এবং কামরূপ রাজ ভাস্কর বর্মা। ৬৪৭ খ্রিস্টাব্দে হর্ষবর্ধনের মৃত্যুর পরে গৌড় রাজ্য বহিঃ শত্রুর দ্বারা পূনঃ পূনঃ আক্রমিত হয় এবং অন্তর্দ্বন্দ্ব শুরু হয়। একশত বৎসর পর্যন্ত চলতে থাকে অন্যায়-অত্যাচার, যুলুম-নির্যাতন। এই যুগকে বলা হয় ‘‘মাৎসান্যায়’’ যুগ।

           

সমতটের ইতিবৃত্ত:- এই মাৎসান্যায় অরাজকতা গৌড় বা বাংলার উত্তরাঞ্চল ও তার পাশা-পাশি এলাকায় চলতে থাকে। তবে সমতট বা বাংলার পূর্ব-দক্ষিন অঞ্চল ছিল উহার প্রভাব মুক্ত। কারণ এ অঞ্চলে তখন ভদ্র বংশ, খড়গ বংশ, রাত বংশ, লোকনাথের বংশ ও দেব বংশ রাজত্ব করেন। তারা রাজত্ব করেন ৯ শতকের কিছু কাল পর্যন্ত। তারপর ৯০০---১০৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চন্দ্র রাজ বংশীয় রাজারা রাজত্ব করেন। তাদের মধ্যে ত্রৈলোক্য চন্দ্র, শ্রীচন্দ্র, কল্যাণ চন্দ্র, লড়হ চন্দ্র ও গোবিন্দ চন্দ্রই প্রধান।

রাজা গোবিন্দ চন্দ্র ১০০৫--- ১০৩০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। গোবিন্দ চন্দ্রের পরে এই অঞ্চল চলে যায় বর্মন ও সেনদের হাতে।

            

পাল বংশ:- খ্রিস্টিয় ৮ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে বাংলার সিংহাসনে আরোহণ করেন পাল বংশীয় রাজা গোপাল। তিনি বাংলার মাৎসান্যায় যুগের অবসান ঘটান। প্রায়  ৪০০ বৎসর পর্যন্ত এই বংশ বাংলায় রাজত্ব করেন। পাল বংশীয় কয়েক জন বিখ্যাত রাজা ধর্মপাল, দেবপাল, মহিপাল ও রামপাল। উল্লেখ যে, পাল বংশীয় রাজা ধর্মপাল পাহাড়পুরে বৌদ্ধ বিহার প্রতিষ্ঠা করেন।

  

            পীরগঞ্জের পালোগড় (দানেশ নগর) এলাকায় এই বংশের রাজাদের পুরাকীর্তির ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়। ১নং চৈত্রকোল ইউনিয়নের এই সমস্ত এলাকা প্রত্নতত্ত্ব গবেষনার দাবী রাখে। যাহোক পাল বংশের শেষ রাজা মদন পালের সময় (১১৪০---১১৫৫খ্রিঃ) এই রাজ বংশ দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন সেন বংশ বাংলার সিংহাসনে আরোহন করেন।

 

 

বর্মন ও সেন বংশ:-  সমতট অঞ্চলে পাল রাজত্বের অবসানের পর বর্মন রাজ বংশ এবং পরে সেন রাজ বংশের সুচনা হয়। ভারতের কর্ণাটক ও রাঢ় অঞ্চল থেকে সেনরা বাংলাদেশে আসেন। এ বংশের প্রথম রাজা বিজয় সেন। তার পিতা হেমন্ত সেন এবং পিতামহ সামন্ত সেন। বিজয় সেন এর পুত্র মহারাজা বল্লাল সেনের রাজত্ব করেন ১১৫৮--- ১১৭৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। বল্লাল সেন এর পুত্র মহারাজা লক্ষন সেন ১১৭৯ ---- ১২০৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। উল্লেখ্য যে উল্লেখিত সেন রাজাদের অন্যতম রাজা নীলাম্বর সেন কামরূপ-কামতা রাজ্যে রাজত্ব করতেন। পীরগঞ্জের চতরা এলাকায় নীল দরিয়া নামক স্থানে তার দুর্গের ধ্বংসাবশেষ দৃষ্ট হয়।

   

বাংলায় মুসলিম শাসনঃ ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজী ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে লখনৌতি (গৌড়) আক্রমণ করতঃ মুসলিম শাসনের সুত্রপাত ঘটান। তৎপরে বাংলায় সুলাতানী, পাঠান ও মোঘল শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশীতে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পতনের পর শাসন ব্যবস্থা চলে যায় কোম্পানির হাতে। ২০০ বৎসর পরাধীনতার পরে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধ শেষে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করি।

            এখানে উল্লেখ্য যে, সুলতানী আমলেই হযরত শাহ ইসমাঈল গাজি (রহঃ) ইসলাম ধর্ম প্রচার করার জন্য বাংলায় আগমন করেন। সর্বশেষ অভিযানে তিনি পীরগঞ্জের নীল দরিয়ার দূর্গ দখল করতঃ বড় বিলায় প্রশাসনিক দপ্তর স্থাপন করেন। একথা পূর্বেই আলোচনা করা হয়েছে।